শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন
❑ দু‘আ করা
পিরিয়ডকালে দু‘আ করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং, উত্তম হবে—অজু করে লাইলাতুল কদরের মহান রজনীতে আন্তরিকভাবে দু‘আয় মনোনিবেশ করা। এই রাতে দু‘আ কবুল হয়। হাদিসে এসেছে, ‘‘দু‘আই ইবাদত।’’ [আবু দাউদ: ১৪৭৯, হাদিসটি সহিহ]
কোনো বিশেষ নিয়ম নয়, স্বাভাবিকভাবে দু‘আর নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে দু‘আ করবেন।
❑ তাওবাহ-ইস্তিগফার পড়া
এই রাতের গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল হলো আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার পড়া। ইস্তিগফারের যত বাক্য মুখস্থ আছে, সবই পড়বেন। পাশাপাশি একটি সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন। সেটি হলো:
আয়িশা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে এই ইস্তিগফারটি অধিক মাত্রায় পড়তেন—
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
[সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি]
অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ১৮৮৬]
এর পাশাপাশি তাওবাহর শর্তগুলো পূরণ করে অবশ্যই নিজের সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করবেন। তাওবাহর তিনটি শর্ত হলো: কৃত গুনাহ স্বীকার করে সেসব আগে ছেড়ে দিতে হবে, নিজ অপরাধের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে এবং ভবিষ্যতে এসব গুনাহ আর না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। [ইমাম নববী, রিয়াদুস সালেহীন]
তাওবাহ্ করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হলো, আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া। তবে, এটি জরুরি নয়। যেহেতু হায়েয অবস্থায় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ, সেহেতু শুধু তাওবাহ ও ইস্তিগফারের কিছু বাক্য পাঠ করে আন্তরিকভাবে দু‘আ করাই যথেষ্ট।
❑ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করা
সর্বোত্তম দরুদ হলো দরুদে ইবরাহিম। আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে যে দরুদ পড়ি, সেটিই দরুদে ইবরাহিম। এর পাশাপাশি অন্যান্য মাসনূন (হাদিসের) দরুদও পাঠ করা যায়।
দুটো সহিহ দরুদ পড়তে পারেন।
اللهم صل على محمد، وعلى آل محمد
আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ। [নাসাঈ: ১২৯১; হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন শায়খ আলবানি (রাহ.)
اللهم صل على محمدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিকা, ওয়া সল্লি ‘আলাল মুঅ্-মিনী-না ওয়াল মুঅ্-মিনা-ত, ওয়াল মুসলিমী-না ওয়াল মুসলিমা-ত]
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আরো রহমত প্রেরণ করুন সকল মুমিন নারী-পুরুষ ও সকল মুসলিম নারী-পুরুষের উপর।
হাদিসে এসেছে, যে-মুসলমানের দান-সাদাকাহ করার মতো কিছু নেই, সে যেন দু‘আ করার সময় এটি বলে। এটি তার জন্য যাকাতস্বরূপ। [সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯০৩, হাকিম: ৪/১৩০, মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১৩৯৭; হাদিসটিকে হাকিম ও যাহাবি (রাহ.) সহিহ বলেছেন। হাইসামি (রাহ.) হাসান বলেছেন]
বিশেষ কোনো সংখ্যা নয়, যতবার ইচ্ছা পড়তে থাকবেন। যত পড়বেন তত লাভ।
❑ বিভিন্ন যিকর করা
র্যান্ডমলি পড়ার যে সকল যিকর আছে, সবই পড়তে পারেন এই রাতে। তবে, উত্তম হবে #সুবহানাল্লাহ্, #আলহামদুলিল্লাহ, #লা ইলাহা ইল্লাহ, #আল্লাহু আকবার এই বাক্যগুলো দিয়ে খুব বেশি পরিমাণে যিকর করা। সহিহ হাদিসে এসেছে, এগুলো আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সর্বাধিক প্রিয় বাক্য।
আরো একটি অসাধারণ যিকর পড়তে পারেন
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
এর মাধ্যমে নেকি লাভ, গুনাহ মাফ এবং দাস মুক্ত করার মতো বিরাট ফজিলত রয়েছে।
হাদিসে একটি বাক্যকে বলা হয়েছে জান্নাতের রত্নভাণ্ডার। সেটিও বেশি বেশি পড়তে পারেন—
ﻻَ ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪ
[উচ্চারণঃ লা হাউলা ওয়ালা ক্বুও-ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ]
অর্থঃ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই। [সহিহ বুখারি: ৪২০৬; সহিহ মুসলিম: ২৭০৪]
❑ জীবিত ও মৃত সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি করে সওয়াব আল্লাহ তার আমলনামায় লিখে দেন।” [তাবারানি, হাদিসটি সহিহ]
এই দু‘আটি পড়তে পারেন
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏُ
[উচ্চারণ: রাব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালি-দাইয়্যা ওয়ালিল মুমিনী-না ইয়াওমা ইয়াক্বূ-মুল ‘হিসাব]
অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদারকে তুমি সেদিন ক্ষমা করে দিও, যেইদিন হিসাব কায়েম করা হবে। [সুরা ইব্রাহিম, আয়াত ৪১]
❑ কদরের রাতে পড়ার বিশেষ দু‘আটি বেশি বেশি পড়া
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব?’ নবীজি বলেন, তুমি বলো—
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন কারীম, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা’অ্ফু ‘আন্নী]
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, মহানুভব! তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [তিরমিযি: ৩৫১৩, হাসান সহিহ]