শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
বাংলা নিউজডে আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রতারণা করেছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) তৃতীয় ও শেষদিনের শুনানিতে এ কথা বলেছে গাম্বিয়া।
উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের বক্তব্যকে প্রতারণা বলে অভিহিত করেন গাম্বিয়ার প্রতিনিধি পল রাইখলার। তিনি বলেন, ‘উদ্বাস্তুদের খুব সামান্য সংখ্যাই ফিরেছে গেছে বলে মিয়ানমার নিজেই স্বীকার করেছে।’
সেই সঙ্গে তার দাবি, ‘মিয়ানমারের আইনজীবী মিস ওকোয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ এবং চীন, জাপান ও ভারতের সহায়তার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।’ রাইখলারের ভাষ্য, ‘মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চায়। রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির দায়িত্বও মিয়ানমারের। কিন্তু সেটি তারা পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’
এর আগে মঙ্গলবার আইসিজে-এ ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে তিন দিন ব্যাপী এই শুনানি শুরু হয়।শুনানির প্রথমদিন মিয়ানমারের শীর্ষ নেতা সু চির উপস্থিতিতে রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
এরপর বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সু চি। এতে তিনি গাম্বিয়ার আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।শেষদিনের শুনানির শুরুতে রাইখলার রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সাতটি মূল বক্তব্য তুলে ধরেন।তিনি বলেন, ‘গতকাল মিয়ানমারের প্রতিনিধি আদালতের কাছে এগুলো অস্বীকার করেননি।’
রাইখলার বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ৩৯২টি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা মিয়ানমার অস্বীকার করেনি। সেই সঙ্গে তারা এও বলেছে, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ও তাদের বিচার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী একমাত্র সামরিক আদালতেই সেনাবাহিনীর কারও অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়, সেনাবাহিনী নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার করবে না।’
প্রসঙ্গত, ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের পেজ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টিও আদালতে আনেন গাম্বিয়ার প্রতিনিধি। যেখানে বর্ণবাদী বক্তব্যে মিন অং হ্লাইংয় বলেছিলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বলতে কোনো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। তারা মূলত বাংলাদেশিদের সমস্যা নিয়ে লড়ছেন।
পল রাইখলার আরও বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতনের কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়ে মিয়ানমার দাবি করছে, এর পেছনে গণহত্যার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না তাদের।’শেষদিন যুক্তি উপস্থাপনে দেড় ঘণ্টা সুযোগ পায় গাম্বিয়া। বিরতির পর রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টায় নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার।
আরো পড়ুন:
রোহিঙ্গা ইস্যু: গণহত্যা ঘটেনি আইসিজে’তে মিয়ানমারের দাবি
রোহিঙ্গা গণহত্যা: আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার শুনানি
রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার শুনানিতে অংশ নিতে দেশ ছাড়লেন সু চি
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।গণহত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ।এই ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নভেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া।
প্রসঙ্গত, গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশন শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয়; বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।
আমেরিকা, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সর্বশেষ খবরের জন্য বাংলা নিউজডের ওয়েবসাইটে আসুন এবং আমাদের Bangla Newsday ফেসবুক পৃষ্ঠাটি সাবস্ক্রাইব করুন।
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা – banglanewsday@gmail.com.